ডেস্ক নিউজ : রাজধানীর গুলশান থানাধীন নিকেতনের বি-ব্লকের ৯১ নং বাসার এ/৩ নং ফ্ল্যাটে ২০১২ সাল থেকে স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস করছেন মাসুদুজ্জামান সরকার। যার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলার খানসামা থানার টংবুয়া গ্রামে।
সে সময় পরিচিত সৈয়দ আলী শাহের মাধ্যমে খুশি আরা (১১) নামের কিশোরীকে কাজের মেয়ে হিসেবে বাসায় নিয়ে আসেন তিনি। খুশি মাসুদুজ্জামানের একই উপজেলার গুচ্ছগ্রামের আজিজার রহমানের মেয়ে।
জানা যায়, খুশি বাসায় থাকাকালীন এক বছর পর ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ বাসা থেকে চলে যায়। সে সময় মাসুদুজ্জামানের ভাই সোহাগ গুলশান থানায় একটি নিখোঁজ জিডি (জিডি নং-১৭২৯) করেন।
এমনকি বাসার মালিক মাসুদুজ্জামান সরকার ওই সময়ই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এক সপ্তাহ মাইকিংও করেন এবং ১০ এর অধিক জাতীয় পত্রিকায় নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। তারপরও খোঁজ মিলেনি খুশির।
অন্যদিকে, মেয়ে হারানোর শোকে খুশির বাবা আজিজার রহমান বাদী হয়ে ২০১৪ সালের ৫ মে মাসুদুজ্জামান ও তাহার স্ত্রী শওকত আরা বেগম শিউলী, সৈয়দ আলী শাহ ও তার ড্রাইভার খগেন্দ্র নাথ রায়ের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দিনাজপুর জেলা আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতও সে সময় খানসামা থানাকে মামলা রুজু করে তদন্তের নির্দেশ দেন। যার প্রেক্ষিতে খানসামা থানার মামলা নং-০৪।
মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে বাদী তা নারাজী দেন। আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। অধিকতর তদন্ত পূর্বক পুনরায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। বাদী পুনরায় নারাজী প্রদান করলে আদালত পুনরায় অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন আছে।
প্রায় ৭ বছর পর গত ৩০ জুন গুলশান থানা পুলিশ বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারে ভিকটিম খুশি বনানী থানাধীন কড়াইল বস্তিতে বসবাস করছেন। পরে ১ জুলাই মাসুজ্জামানের স্ত্রী শওকত আরা বেগম শিউলী গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ, গুলশান থানা বরাবর ভিকটিম খুশিকে উদ্ধারের জন্য আবেদন করেন।
পরে এসআই মো. আনোয়ার হোসেন খান সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় বনানী থানাধীন কড়াইল বস্তির বউ বাজার খোকনের বাসা থেকে খুশিকে উদ্ধার করে নিরাপদ হেফাজতে নেয়। পরে মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই জাবিরুল ইসলামকে মুঠোফোনে অবহিত করলে তিনি গুলশান থানায় এসে খুশিকে আদালতে উপস্থাপনের জন্য নিরাপদ হেফাজত থেকে বুঝে নেন।
জিজ্ঞাসাবাদে খুশি জানায়, ‘সেসময় বাসা থেকে হঠাৎ বের হয়ে পথ হারিয়ে ফেলে। হাঁটতে হাঁটতে গুলশান থানাধীন গুদারাঘাট এলাকায় রাস্তার পাশে গাছের নিচে বসে কাঁদতে থাকে। গুলশান-১ ডিসিসি মার্কেটের ক্লিনার মনোয়ারা বেগম তাকে কাঁদতে দেখে তার নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু খুশি তার নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে না পারায় মনোয়ারা কড়াইল বস্তিতে তার বাসায় নিয়ে যান এবং তিনিই খুশিকে দীর্ঘ ৭ বছর লালন পালন করেন।’